সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১১

Daily Amardesh -ঢাকা, সোমবার ১৩ জুন ২০১১, ৩০ জৈষ্ঠ্য ১৪১৭, ১০ রজব ১৪৩২ হিজরী

Daily Amardesh -ঢাকা, সোমবার ১৩ জুন ২০১১, ৩০ জৈষ্ঠ্য ১৪১৭, ১০ রজব ১৪৩২ হিজরী

সারাদেশে সাত শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার : সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া মোবাইল কোর্টের সাজা নজিরবিহীন : বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার
সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত একতরফাভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের যে শাস্তি দিচ্ছে, তা নজিরবিহীন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হরতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের শাস্তি দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, হরতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া একতরফাভাবে শাস্তি দিচ্ছে। ১৯৫২ সালের তামাক ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ ধরনের শাস্তি দেয়া নজিরবিহীন ঘটনা।
ঔপনিবেশিক আমলেও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এভাবে আইনের অপপ্রয়োগ হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার র্যাব ও পুলিশকে হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতো ব্যবহার করছে। এ ঘটনা হানাদার বাহিনীর নির্যাতনকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের আলোচনার আমন্ত্রণ জানানোর জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। কারণ তারা আগেই বলে দিয়েছেন আদালতের রায়ের বাইরে যাওয়া যাবে না। সারাদেশে সফল ও সর্বাত্মক হরতাল চলছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালে আন্দোলন চলবে। বিএনপি ওই ব্যবস্থা ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে সরকারের সিদ্ধান্ত ও সংবিধান সংশোধনসহ বিভিন্ন দাবিতে ৩৬ ঘণ্টার জন্য একটানা হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ও সমমনা দলগুলো।
মির্জা ফখরুল হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করার জন্য দেশবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশি হামলায় আহত সাংবাদিকদের সুচিকিত্সার দাবিও জানান।
তিনি বলেন, হরতাল চলাকালে র্যাব ও পুলিশের অভিযান দেখে মনে হয়েছে তারা হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতো আচরণ করছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী আওয়ামী সরকারের অপরের মতের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা নেই। এমনকি সংবাদকর্মীদের হামলা করতেও তারা পিছপা হয়নি। এতে চ্যানেল আইয়ের বাবু, দেশ টিভির শিবলী, এটিএন বাংলার মহসিনসহ যেসব সাংবাদিক আহত হয়েছেন তাদের প্রতি সহানুভূতি ও একাত্মতা ঘোষণা করছি।
তিনি হরতালে জনগণের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার জন্য এই দুর্ভোগটুকু জনগণ মেনে নেবে বলে আমরা মনে করি।
মোবাইল কোর্টের অবৈধ ব্যবহারের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে কোনো মামলা করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে দলের সিনিয়র আইনজীবীরা চিন্তাভাবনা করছেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম-মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, রুহুল কবির রিজভী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি, প্রচার সম্পাদক ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি প্রমুখ।
সাতশ’র বেশি গ্রেফতার : সংবাদ ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, হরতাল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে সাতশ’র বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন, দলের সহসভাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম স্বপন, কৃষক দল নেতা শাজাহান মিয়া সম্রাটসহ অন্যান্য নেতাকর্মী। তিনি আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।
মহিলা দলের সভানেত্রী নূরে আরা সাফাকে আটকের সময় পুলিশের আচরণের নিন্দাও জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, নূরে আরা সাফাকে মাটিতে ফেলে ৭-৮ জন চেপে ধরে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে তুলেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, হরতাল চলাকালে ঢাকা মহানগরের নয়াপল্টনে বিপ্লব, শিমুলসহ ১৬ জন, মতিঝিলে আবুল হোসেনসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। রামপুরায় জাসাস নেতা সোহেলকে ৩ মাসের ও কামাল উদ্দিন দুলুকে একমাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া রামপুরা থেকে ১১ জন, গুলিস্তান ৬, সবুজবাগ ৮, লালবাগ ১৪, শাহআলী ১৩, খিলখেত ১৭, পল্লবী ১১ জন, শের-ই-বাংলা থানা ১৫, গুলশান-মহাখালী ২১, সেগুনবাগিচা এলাকায় ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, এফডিসি রেলক্রসিংয়ে হরতালের সমর্থনে মিছিল করার সময় পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটায় বিএনপি সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, জাসাস সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক মনির খান, ছড়াকার আবু সালেহ, কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনিন, রিজিয়া পারভিন, চিত্রনায়ক অমিত হাসানসহ ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় বাংলা ভিশনের ক্যামেরাম্যান উজ্জ্বল দাসকে নিষ্ঠুরভাবে লাঠিপেটা করে আহত করা হয়।
তিনি বলেন, শ্যামপুরে হরতালের সমর্থনে মিছিল করার সময় যুবলীগের দুর্বৃত্তদের আক্রমণে বিএনপি নেতা তৌহিদুল, সোহেল, মোহাম্মদ মিয়াসহ ৩০ আহত হয়।
এছাড়া ঢাকা হাইকোর্ট এলাকা থেকে ১৭ জন, কেরানীগঞ্জ ২৫, নীলফামারী ৪ জন, ময়মনসিংহ ১৬, কিশোরগঞ্জ-৯, বগুড়া-১৫, বরিশাল-১৫, পটুয়াখালী- ১৩ জন, খুলনা মহানগরে মিছিলে আক্রমণ চালিয়ে ৩০ জন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৩১ জন, চট্টগ্রাম উত্তর ১২, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ১১, হবিগঞ্জ-৯ আহত-৪০, পিরোজপুর-১৯, মাদারীপুর ১৭, বরগুনা ১৩ জন, জয়পুরহাট ৬ জন ও ভোলায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
  • প্রথম পাতা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন