রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১১

বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত : আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল, আপনি কোন দলে?


বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত : আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল, আপনি কোন দলে? 
আহসান কবির
কেউ বলে খালেদা কেউ বলে হাসিনা
দুইভাগে ভাগ হওয়া মোটে ভালোবাসিনা
অসাধারণ এই ছড়াটি এরশাদের রাজত্বকালে লিখেছিলেন ছড়াকার আবু সালেহ। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে হাসিনা ও খালেদার এক হয়ে আন্দোলন করার স্বপ্ন থেকে তিনি ছড়াটি লিখেছিলেন। তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল এবং স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হয়েছিল। তবে দেশ এখনো দুইভাগে বিভক্ত। এদেশে কেউ আর মানুষ নেই যেন! সব আওয়ামী লীগ বিএনপি হয়ে গেছে। হাসিনা আর খালেদার ভক্তকুলে পরিণত হয়েছে।
ইদানীং আরো একটা কারণে দেশ দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। কারণটা বিশ্বকাপ। আওয়ামী লীগ আর আর্জেন্টিনার ভেতর কেমন করে যেন মিল খুঁজে পাচ্ছেন একদল লোক। তারা আবার বলছেন বি ফর বিএনপি বি ফর ব্রাজিল। এই সমীকরণ বোধ করি ঠিক না। আওয়ামী লীগের বহু সমর্থক আছেন, যারা ব্রাজিলের সমর্থক। বিএনপির বহু মানুষ আছেন, যারা আর্জেন্টিনার সমর্থক।
যাই হোক দুইভাগে ভাগ হওয়ার ইতিহাস পৃথিবীর আদিলগ্ন থেকেই আছে। দেবতাদের বিপরীতে অসুররা আছেন। বাংলা সিনেমায় নায়কদের বিপরীতে ভিলেনরা আছেন। খেলাধুলায় সারা পৃথিবীতে আর্জেন্টিনার বিপরীতে ব্রাজিল আছে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইসরাইলের বিপরীতে ফিলিস্তিন জানবাজি ধরে আছে। বঙ্গবন্ধুর সেই অমর ভাষণে আছেÑ পৃথিবী দুইভাগে বিভক্ত। একদল শোষক আর একদল শোষিত। আমি শোষিতের দলে।
আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল দুটোই শোষিতের দলের অর্থাৎ ল্যাটিন অ্যামেরিকার দেশ। তাদের ফুটবল নিয়ে আছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে কী আছে?
এক. বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের যত পতাকা আছে ঐ দুই দেশে এই মুহূর্তে ততগুলো আছে কিনা সন্দেহ।
দুই. আর্জেন্টিনার  খেলা বিদ্যুতের অভাবে দেখতে না পারার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদ্যুৎ অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলে এমন বোনাফাইড সাপোর্টার আছে কিনা সন্দেহ।
তিন. এই দুই দলের কোনটা জিতলেই আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। আনন্দ মিছিল বের হয়। খারাপ কী?
চার. চাঁদা তুলে পাড়া-মহল্লায় বড় পর্দায় ফুটবল খেলা দেখা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ঐ দুই দেশে এমনটি আছে?
পাঁচ. বিশ্বকাপ নিয়ে এদেশে এখন টিভি নাটকও হয়। আগেও হয়েছে। যেমন-ফাউল, আহ ফুটবল বাহ ফুটবল। ফুটবল নিয়ে জাগো নামে একটা ছবিও হয়েছেÑ যেটা দুইবার শুট করা হয়েছিল। ইংরেজি একটা ছবিও আছে বেন্ড ইট লাইক বেকহ্যাম। পেলে অভিনয় করছেন এমন একটি ছবি ভিক্টরি টু স্কেপ।
ছয়. এদেশে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সাপোর্টাররা আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মতোই উগ্র। রাজনীতির উত্তাপ এখানেও আছে।
সাত. পেলে ও ম্যারাডোনা এদেশে দেবতার মতোই সম্মান পান। এত সম্মান তারা অন্য কোথাও পান কিনা সন্দেহ। কে বড় তা নিয়ে এদেশে যত বিতর্ক হয় অন্য কোথাও তা হয় না।
এবার  কৌতুক।
এক. কে বড়? পেলে না ম্যারাডোনা?
উত্তর ব্রাজিলেই একটা জরিপ হয়েছে। সেই জরিপে পেলে দ্বিতীয় স্থানে আছেন। প্রথম স্থানে অবশ্যই ম্যারাডোনা! কৌতুকটা বানিয়েছে আর্জেন্টাইনরা।
এবার ফিরতি কৌতুক। ম্যারাডোনা কোন খেলায় সবচেয়ে বেশি পারদর্শী? উত্তর হ্যান্ডবলে। কারণ তিনি তার সবচেয়ে বেশি ভালো গোলটা হাত দিয়ে দিয়েছিলেন!
দুই. কোনটা সহজ? পেলের গোল হিসেব করা নাকি গার্লফ্রেন্ডের সংখ্যা মনে রাখা? উত্তর হচ্ছে দ্বিতীয়টা। পেলের ছেলে কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত আসামি!
এবার ফিরতি প্রশ্ন। ম্যারাডোনার বেস্ট ফ্রেন্ড কারা? উত্তর যে কোনো দেশের ড্রাগলর্ডরা!
এবারে বুঝুন অবস্থা। কৌতুকও দুই দলে বিভক্ত। কিছু কিছু বিভক্তি আছে শিল্পে পরিণত হয়। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার খেলা তেমনই। সো হয়ে যাক। টান টান উত্তেজনা নিয়ে বিভাজিত হন। মেতে উঠুন বিশ্বকাপের ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাময় উত্তেজনায়।
theahsankabir@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন