রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১১

২৩ মে ১৯৮০’ হত্যাকান্ডঃ বাংলাদেশে প্রথম রাজনৈতিক বোমা হামলা / আবু জুবায়ের


২৩ মে ১৯৮০’ হত্যাকান্ডঃ বাংলাদেশে প্রথম রাজনৈতিক বোমা হামলা / আবু জুবায়ের

ব্লগারের প্রোফাইল ছবি
২৩ মে ১৯৮০ সালে সাবেক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের পল্টনের জনসভায় বোমা বিস্ফোরন ছিলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রথম ঘটনা।আজ হয়তো অনেকে ঘটনাটি ভুলে গেছে কিংবা বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিক বিষয়টি জানে না।ঐ উন্মুক্ত জনসভায় বোমা বোমা বিস্ফোরনে সাংবাদিকসহ প্রায় ৮ জন নিহত হয় এবং আহত হয় শতাধিক।ঐ হত্যাকান্ড ঐ সময়ের রাজনৈতিক মহলে ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।২৪ মে দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিলো-শুক্রবার বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গনে ডেমোক্রেটিক লীগের জনসভায় প্রচন্ড বোমা বিস্ফোরনের ফলে একজন সাংবাদিকসহ সাতজন নিহত হয়েছে,আহত হয়েছে প্রায় একশজন।আহতদের মধ্যে পাচঁজন সাংবাদিক রয়েছে।সাংবাদিকরা হলেন-কাজী মোস্তাফিজুর রহমান নিহত (দৈনিক বাংলা),জনাব মাশির হোসেন (দৈনিক বাংলা),জহিরুল হক (দৈনিক বাংলা),আবু সালেহ (দৈনিক দেশ),কামরুজ্জামান (দৈনিক বাংলা),মাহবুবুল আলম (মুক্তিবানী),বাঙ্গাল আব্দুল কুদ্দুস (দৈনিক আকবর),আব্দুল মান্নান (দৈনিক সংগ্রাম)।আহতদের মধ্যে জহিরুল হক,আবু সালেহ এবং রেজাউল হক সরোজের অবস্থা আশংকাজনক।মোটামুটি সর্বমহল থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়।সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হয়।একটি প্রতিবাদ সভায় বলা হয় -এই ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ তীব্র প্রতিবাদ করছে এবং ফ্যাসিবাদিদের বিরুদ্ধে সকলের প্রতি সাংবাদিক সমাজ আহবান জানায়।এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।এ টি এম শসুদ্দিন ভূইয়াকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ সরকার।তদন্ত কমিটির কার্য পরিধি নির্ন্য় করা হয়।



১।তদন্তের মাধ্যমে ব্যক্তি বা গোষ্ঠিদের চিহ্নিত করা হবে।ঘটনার পেছনে কোন রাজনৈতিক দল আছে কিনা তা চিহ্নিত করতে হবে।



২।জনসভার সময় শান্তি-শৃংখলা বাহিনী তাদের কাজ ঠিক মতো করে ছিলো কিনা তা খুজেঁ বের করতে হবে।



এই ঘটনায় ততকালীণ সংসদে ব্যপক হট্টগোল হয়।সবায় প্রকৃত দোষিদের খুজে বের করার জন্য একমত পোষন করে।কিন্তু আজ পর্যন্ত এই বোমা হামলার তদন্ত সম্পন্ন হলোনা কিংবা এর পেছনে কারা জড়িত ছিলো সেটা জানা গেলো না।প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হবার পর এই ঘটনা সকলের আড়ালে চলে গেছে।কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি ছিলো প্রকাশ্যে প্রথম বোমা হামলা।এই বোমা হামলার ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলোনা।ততকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটিকে যেমন মুল্যাকয়ন করা যায় ঠিক তেমনি আজকের জঙ্গীবাদ,সন্ত্রাসবাদ এই ধরনের নানা প্রচারনার সূত্রধরদে এই ঘটনার বিশ্লেষনে চিহ্নিত করা যেতে পারে।ঐ ঘটনায় অনেকে প্রান হারিয়েছিলো সেই সাথে অনেক সাংবাদিক এবং সাধারন মানুষ আজও নানা শারিরীক,মানসিক,অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে কোন মতে বেচেঁ আছে।বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব জহিরুল হক বছর খানেক আগে ইন্তেকাল ্করলেন।এই হামলার পরিপেক্ষিতে তার শারিরীক অসুস্থতা ছিলো।এই ঘটনার জন্য অকালেই তার মত মেধাবী একজন সাংবাদিককে আমাদের হারাতে হয়েছে।এই রকম আরো কয়েকজন সাংবাদিক এখনো জীবিত আছে যারা দুর্বিষহ জীবন নিয়ে বেচেঁ আছেন।আমার একটি বিষয় অবাক লাগে এটা ভেবে যে সকল বোমা হামলার কথা বলা হলেও এই বোমা হামলার কথা বলা হয়না।কিন্তু এই বোমা হামলা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কারা নিয়ে এসেছে,১৯৮০ সালের বোমা হামলা তদন্ত কিংবা পর্যালোচনা করলে হয়তো বের হয়ে আসতে পারে।সেই খন্দকার মোশতাক আহমেদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসাবে আওয়ামী লীগকেই ধরে নেয়া হতো।সেই সময়ে অনেকে মনে করতো এটা আওয়ামী লীগের কাজ।সেটা যারই কাজই হয়ে থাক না কেন মনে রাখতে হবে যে এই হত্যাকান্ডের চক্রান্তের শেকড় হয়তো এই বি ডি আর হত্যাকান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদ বিবিসি রেডিও তে বহুদিন আগে একটা এই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি রিপোর্ট করেছিলেন।এর পর আর কেউ এটা নিয়ে কথা বলে নি।আমাদের সকলকে আবার সাংবাদিকসহ সাধারন মানুষের হত্যাকান্ডের বিচারের ব্যাপারে সোচ্চার হয়া উচিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন