সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১১

চৌধুরী আলমকে জীবিত অথবা মৃত ফেরত দিন, নইলে আন্দোলন অনশনে হুঁশিয়ারি


চৌধুরী আলমকে জীবিত অথবা মৃত ফেরত দিন, নইলে আন্দোলন
অনশনে হুঁশিয়ারি
স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবিত অথবা মৃত_ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে ফেরত দিন। নইলে আন্দোলন। তার সন্ধান না পাওয়া পর্যনত্ম বিএনপি ঘরে ফিরে যাবে না। হত্যা নিশ্চিত হলে বিচার করে ঘরে ফিরব। সরকার তাকে অপহরণ করেছে, কাজেই তাকে ফেরত দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। তা ছাড়া চৌধুরী আলমের সন্ধান না পাওয়া পর্যনত্ম ডিসিসি কমিশনারদের কেউ দায়িত্ব পালন করবেন না। ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমের সন্ধান ও সরকারের নির্লিপ্ততার প্রতিবাদে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত প্রতীক অনশন কর্মসূচী থেকে সরকারের প্রতি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বিএনপির শীর্ষ নেতা, ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা। ডিসিসি কমিশনারদের পৰে অনশন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। এতে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, কমিশনার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সাংবাদিক, চৌধুরী আলমের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
অনশনে বিএনপির শীর্ষ নেতারা অভিযোগ করে বলেন, আন্দোলন রোধে সরকার বিরোধী দলের নেতাদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন ও গুম করার নীতি বেছে নিয়েছে। বিরোধী দলের প্রতি যারা নির্যাতন চালাচ্ছে তাদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কেউ পার পাবে না। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বলেন, যিনি মানুষের জীবনের নিরাপত্তাসহ সন্ধান দিতে পারে না তাকে পদত্যাগ করতে হবে। বিটিভিসহ সব সংবাদ মাধ্যমে চৌধুরী আলমের গ্রেফতারের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ সরকার বলছে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। নেতৃবৃন্দ বলেন, চৌধুরী আলমের খোঁজ পাওয়ার ইসু্যকে কেন্দ্র করে সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। ২৫ জুন চৌধুরী আলমকে সাদা পোশাকের লোকেরা একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে তার কোন সন্ধান মেলেনি। সরকার পরিকল্পিতভাবে তাকে গুম করার অভিযোগ করে বিএনপি নেতারা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে ফেরত পাওয়া না গেলে তার হত্যার বিচার করে ঘরে ফিরব।
অনশন কর্মসূচীতে সংহতি প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, সরকার রিমান্ডের নামে বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা চৌধুরী আলমের মতো কাউন্সিলরকে গুম করে চুপ হয়ে আছে। এভাবে দমন-নির্যাতন করে তারা জনগণকে দাবিয়ে রাখতে চায়। নির্যাতন চালিয়ে বিরোধী দলকে দমানো যাবে না উলেস্নখ করে তিনি বলেন, সরকার সবক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে এখন দমননীতির আশ্রয় নিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জীবিত অথবা মৃত চৌধুরী আলমকে আমরা ফেরত চাই। কিন্তু বাসত্মবতা হলো এ ব্যাপারে সরকারের কোন মাথাব্যথা নেই। সরকার তাকে অপহরণ করেছে, তাই সরকার তাকে ফেরত দেবে। অন্যথায় বিএনপি ঘরে বসে চোখের জল ফেলবে না। আন্দোলন হবে। যারা বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছে তাদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কেউ পার পাবে না। চৌধুরী আলমকে না পেয়ে আমরা ঘরে ফিরে যাব না। সব কিছুর জবাব রাজপথে দেয়া হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর বলেন, চৌধুরী আলমকে ফিরিয়ে না দিলে বুঝতে হবে সরকার অপহরণের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমান সরকারের আমলে ৬১টি গুপ্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। দেশে এখন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। চৌধুরী আলমকে ফিরিয়ে আনতে বিএনপি সর্বশক্তি দিয়ে আন্দোলন করবে। বিএনপির উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা একটি শানত্মিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে কেন মানুষ নিখোঁজ থাকবে। কেন তাকে বের করা যাবে না। চৌধুরী আলমকে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক সদরম্নল আমিন বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার এরকম করতে পারে না। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
কণ্ঠশিল্পী ও বিএনপি নেতা আসিফ আকবর বলেন, চৌধুরী আলম কোথায়? জালিম সরকারের কাছে এর জবাব চাই। সঠিক জবাব দিতে না পারলে সরকারের বিরম্নদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি নেতাদের মুক্তির দাবি জানান তিনি। ডিসিসি কমিশনার আলতাফ হোসেন বলেন, চৌধুরী আলমকে না পাওয়া পর্যনত্ম কমিশনারদের কেউ কাজে যোগ দেবেন না। কলম বিরতি চলবে। সাংবাদিক আবদুল হাই সিকদার বলেন, চৌধুরী আলম গুম হলে সরকারকে গুম হয়ে যেতে হবে।
ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে কর্মসূচীতে সংহতি প্রকাশ করেন বিএনপির উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উলস্নাহ আমান, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, বরিশালের সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সারোয়ার, বিরোধী দলের হুইপ জয়নাল আবদিন ফারম্নক, সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাবি আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, মেজর (অব.) রম্নহুল আলম চৌধুরী, মহিলা দলের সভাপতি সেলিমা রহমান, পুলিশের সাবেক আইজি ও বিএনপি নেতা আবদুল কাইয়ুম, সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী, সাইফুল আলম মিলন, সাবেক রাষ্ট্রদূত ডা. মোঃ জলিল, বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, জাগপা নেতা খন্দকার লুৎফর রহমান, অধ্যাপক গাজী আবদুল হক, সাইফুল ইসলাম মিলন, শ্রমিক নেতা আবুল কাশেম, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন আহমেদ, ছড়াকার আবু সালেহ, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন, আহসান হাবিব কামাল, চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরম্নল ইসলাম, কমিশনার কাওসার আলী, মরিয়ম বেগম সীমা, বাবুল সরদার, শামসুন্নাহার, মনি বেগম, রোকেয়া সুলতানা তামান্না, হাজী আলতাফ হোসেন, মমতা চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কমিশনার মনি। এ ছাড়া বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এতে সংহতি প্রকাশ করেন। সকাল ১০টা থেকে শুরম্ন হওয়া কর্মসূচী বিকেল ৫টায় সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন