রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১১

ছড়াকার আবু সালেহ



আলম তালুকদার
তেলের শিশি ভাঙ্গলো বলে/খুকুর পরে রাগ করো/তোমরা যেসব বুড়ো খোকা ভারত ভেঙ্গে ভাগ করো! তারবেলা? 
ছড়াটি পাঠ করলে বা শুনলে অনেকেই এক সেকেন্ড দেরি না করে বলে দেবে­ অন্নাদাশঙ্কর রায়ের ছাড়া। 
ঠিক তেমনি ‘ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা।/ রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা।’ ছড়াটি উচ্চারণের সাথে সাথে ছড়া বোদ্ধারা, ছড়া রসিকজন চোখ বুজে বলে দেবেন ছড়াকার আবু সালেহ এই ছড়ার স্রষ্টা। 
সবাই ছড়াকার নয়। কেউ কেউ ছড়াকার। 
আবার সব ছড়াই ছড়া নয়, দু-একটি ছড়াই ছড়া হতে পারে। 
ছড়াকার আবু সালেহ অনেক ভালো ছড়া লিখেছেন, এখনো লিখে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি ওই ছড়াটিকে অতিক্রম করে আরো কিছু ছড়া আমাদের উপহার দিতে পারবেন কি না এটা একটা প্রশ্ন বটে। 
‘ছড়াকার” এই যে শব্দটি এই শব্দটিকে বিস্তার করে একটা সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করার অগ্রনায়ক হিসেবে আবু সালেহকে অনেকেই চিহ্নিত করে থাকেন। তিনি লিখে আসছেন ষাটের দশক থেকে। 
পারিবারিক আবহ ছিল তার অনুকূলে। পল্টনের ছড়া তাকে খ্যাতির শিখরে আসীন করে। এ পর্যন্ত তিনি ৬০টির অধিক ছড়াগ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি নিরন্তর চলমান ছড়াকার। যেকোনো বিষয়ের ওপর লিখতে পারঙ্গম। তবে রাজনৈতিক, সমসাময়িক বিষয়কে নিয়ে তার কলম বেশি রকম শাণিত। 
তিনি একজন সংগঠক, একজন সাংবাদিক, একজন উপস্খাপক রাজনীতিসচেতন আধুনিক ছড়াকার। অধ্যাত্মিক জগতেও তার বিচরণ আছে। তার বাবা একজন বিখ্যাত আলেম এবং পীর ছিলেন। ইদানীং তিনি আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করছেন। যেমন­ 
‘তোমার প্রেমে দিনে রাতে করি আহা উহু 
জাল্লা জালালাহু 
হর হালতে জিকির করি মুর্শিদের ঐ পাগড়ি ধরি 
দেহ মনে জারি থাকে আল্লাহু আল্লাহু।’ 
ছড়াকার হিসেবে তিনিই প্রথম একাডেমী এবং একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। তিনি অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কারসহ এ পর্যন্ত শতাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সাহিত্য পত্রিকা, পূর্বাচল, আগামীতে মধুমাস, মায়ের ছড়া ইত্যাদি সম্পাদনা করেছেন। 
তার উল্লেখযোগ্য ছড়াগ্রন্থ হলো, পল্টনের ছড়া, গ্রামের নাম চৌগাছি, ধুমধাড়াক্কা তাড়িং মারিং, চিরকালের খোকা, ধোলাই ছড়া, অন্য রকম লিমেরিক, আলোকলতা দোলকলতা, হাজার লিমেরিক, খুকু যদি হাসে, কাঁচা হাতের ছড়া গড়াই গাজীর ছড়া, হাজার ছড়া বৈরী ছড়া, পাখির ঠোঁটে ছড়া, ঢাকা যদি ভালো থাকে, আবু সালেহর শিশু সমগ্র-১ ইত্যাদি। 
ছড়াকার আবু সালেহ এর পাঠকপ্রিয়তা ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। তিনি বহুগুণের অধিকারী। তবে তার মুখস্খ রাখার ক্ষমতা অসাধারণ। নিজের ছড়া এভাবে কেউ মুখস্খ বলতে পারে, না শুনলে বিশ্বাস করা কঠিন বটে। এই গুণী ছড়াকারের শুভ জন্মদিন আগামী ২২ জুলাই। তার জন্মদিনে একটি ছড়া দিয়েই শুভেচ্ছা জানাই। 
ছড়াকার আবু সালেহ/রাজতিলক তোমার ভালে/বেঁচে থাকো কালে কালে/জীবন কাটুক ছড়ার তালে।
ঐঙগঊ    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন