রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১১

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণঅনশন অনুষ্ঠিত


খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণঅনশন অনুষ্ঠিত
 
সংসদে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পুলিশের লাঠিপেটা, নেতা-কর্মীদের ওপর গ্রেপ্তার-নির্যাতন এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে বিএনপি গণঅনশন কর্মসূচি পালন করে আজ। এতে নেতৃত্ব দেন সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
 
বর্তমান সরকারের আড়াই বছরে এটি বিএনপির প্রথম গণঅনশন কর্মসূচি। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ৮ ঘণ্টার গণঅনশন কর্মসূচির সমাপ্তি হয় সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। অনশন শুরু হয় সকাল ১০টা ৫ মিনিটে। সন্ধ্যায় কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাজমেরী এস ইসলামঅধ্যাপক তাহমিনা খালেদা জিয়াকে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান
অনশন ভাঙ্গার পূর্বে খালেদা জিয়া এক ঘন্ট‍া বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি ঘোষণা করেনহরতাল নয়শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। কর্মসূচি শুরু হবে ঈদের পর। আরো বলেন, \"আর জ্বালাও-পোড়াওভাংচুর-ধ্বংসের রাজনীতি নয়হরতালনয়মানুষকে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মতো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটানো হবে। ঈদের পরই আমরা কর্মসূচি শুরু করবো। শুধু আপনারই নয়সঙ্গে পরিবারসহ সবাইকে নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে।\" ওই আন্দোলনের জন্য তিনি  জনগনকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানান 
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সুসর্ম্পক গড়ে তোলার কথা ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, \"আমরা মাথা উঁচু করে থাকতে চাই। সবার সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সর্ম্পক রক্ষা করতে চাই। নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো চুক্তি করার পক্ষে নই আমরা।\" বিরোধীদলের ওপর পুলিশ-র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার \'বাড়াবাড়িতে\' ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, \"পুলিশ ও র‌্যাব বাহিনীকে সর্তক করে বলছি- এই দিন দিন নয়এই সরকারই শেষ সরকার নয় এই সরকার চলে গেলে কেউ তোমাদের রক্ষা করতে করতে পারবে না।\"বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশের নির্যাতনের কঠোর সমালোচনা করে খালেদা বলেন, \"যে পুলিশ বাহিনীসংসদ সদস্যকে সালাম দেওয়ার কথা। সেখানে ওই পুলিশের বুটের নিচে আজ গণতন্ত্র চাপা পড়েছে।\" গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, \"রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করছে গোয়েন্দারা। আমিবলতে চাই- আপনারা অনেক বাড়াবাড়ি করছেন। এ থেকে বিরত থাকুন। দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করুন।\" নইলে এর পরিণতি শুভ হবে না বলে সতর্ক করেন খালেদা
অনশন কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলপেশাজীবী সংগঠনের নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। মোট ৩৯ জন বক্তব্য রাখেনকন্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনমুনীর খানহ বিভিন্ন শিল্পী দলীয় সঙ্গীতসহ কয়েকটি কোরাস গান পরিবেশন করেন। বক্তাদের বক্তব্যে ফাঁকে ফাঁকে পাঠ করা হয় কবিতা

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাত্মতা ও অংশগ্রহন
কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি অনশন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেদোয়ান আহমেদযুগ্ম মহাসচিব শাহাদা হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মঞ্চে খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়েএকাত্মতা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য সভাপতি অলি আহমদ বিদেশ রয়েছেন। অন্যদিকে অধ্যাপক  বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা অনশন কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে আগেই
চারদলের শরিক জামায়াতে ইসলামীইসলামী ঐক্যজোটবাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)সমমনা দলগুলোর মধ্যে ইসলামিক পার্টি,লেবার পার্টিন্যাশনাল পিপলস পার্টিজাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টিজাতীয় পার্টি (মতিন)মুসলিম লীগ,বাংলাদেশ ন্যাপন্যাপ-ভাসানীকল্যাণ পার্টিহিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টন্যাশনাল ইয়ুথ ফোরামফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসাংবাদিক সমিতিইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ শতাধিক দল ও সংগঠন এইকর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমেদভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামবাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমানখেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাকজাগপা প্রধান শফিউল আলম প্রধানইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামীন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলুন্যাপ এর সভাপতি জেবেল রহমান ঘানিইসলামিক পার্টির সভাপতি আবদুল মবিনমুসলিম লীগের মহসচিব আতিকুল ইসলামন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মূর্তজালেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানজাতীয় পার্টি (মতিন ) মহাসচিব আবু নাসের মোহাম্মদ রাহমাতুল্লাহন্যাপ ভাসানীর সভাপতি শেখ আনোয়ারুল হকহিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টেরগৌতম চক্রবর্তী প্রমুখ নেতা এসময় বক্তব্য দেন

পেশাজীবীদের একাত্মতা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মাজেদগণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদঅধ্যাপক এ এস এম ফায়েজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ আইনজীবীপ্রকৌশলীকৃষিবিদডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সাংবাদিকরা এই অনশনে একাত্মতাপ্রকাশ করে
পেশাজীবীদের মধ্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক মাহমুদুর রহমানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক সদরুল আমিনঅধ্যাপক মাহবুবউল্লাহঅধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শওকত মাহমুদ,কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নতুন নেসা তাহমিদা খাতুনজাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস শহিদশিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াচলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলামপ্রকৌশলী আ ন হ আখতার হুসেনকবি আল মুজাহিদীকবি আবু সালেহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন

\'বাবার রক্ত যেন বৃথা না যায়\'
জয়নুল আবদিন ফারুকের মেয়ে তামান্না বলেন, \"আমাব বাবার ওপর পুলিশি কী অত্যাচার করেছেতা দেশবাসী টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখেছেন। আপনারা এর বিচার করবেন- এটাই আমার আকুতি। আমার বাবার রক্ত যেন বৃথা না যায়। তিনি গণতন্ত্রের জন্য পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।\" ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিসাধীন ফারুককে উন্নত চিকিসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তামান্না তিনি তার বাবার আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া চান
গণঅনশন বিএনপির নেতারা
অনশন কর্মসূচিতে বিন‌নেপি ও অংগসংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন স্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত একপাশের পুরো সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ব্যানার নিয়ে সমবেত হয়অনশনের জন্য নির্মাণ করা হয় বিশাল মঞ্চ। মঞ্চ ও আশপাশে টানানো হয় প্যাণ্ডেলবিশাল প্যাণ্ডেলে চার পাশে জিয়াউর রহমানখালেদা জিয়াতারেক রহমানের ছবি সম্বলিত বিভিন্ন ব্যানার টানানো হয়। মঞ্চে খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতা ও সাংসদরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম ও দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন
অনশনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামস্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনআর এ গনিমওদুদ আহমদ,মাহবুবুর রহমানএম কে আনোয়ারআ স ম হান্নান শাহগয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহসভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরীআবদুল্লাহ আল নোমান,ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকাউপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীফজলুর রহমান পটলওসমান ফারুকমেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান (অব)হাফিজ উদ্দিন আহমেদইনাম আহমেদ চৌধুরীশাহজাহান ওমরশামসুজ্জামান দুদুআহমেদ আজম খানযুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানসালাউদ্দিন আহমেদবরকত উল্লাহ বুলুমিজানুর রহমান মিনুসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ নেতাবৃন্দ,কেন্দ্রীয় নেতাসাংসদরা এবং নেতা-কর্মীরা অংশ নেন


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন