রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১১

Daily Amardesh -ঢাকা, সোমবার ১৩ জুন ২০১১, ৩০ জৈষ্ঠ্য ১৪১৭, ১০ রজব ১৪৩২ হিজরী

Daily Amardesh -ঢাকা, সোমবার ১৩ জুন ২০১১, ৩০ জৈষ্ঠ্য ১৪১৭, ১০ রজব ১৪৩২ হিজরী

সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ : রাজপথে অবস্থান ও সাংবাদিক নেতাদের প্রতিবাদ

স্টাফ রিপোর্টার
হরতালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গতকাল পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। এ সময় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ৬ সাংবাদিক আহত হন। এ হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা রাজপথে তাত্ক্ষণিক অবস্থান ধর্মঘটে বসে যান। তারা স্টিল ও ভিডিও ক্যামেরা, কলম ও নোটবই রাস্তার ওপর রেখে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। পরে
পুলিশের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ এবং দায়ী পুলিশের বিচারের আশ্বাস দেয়ার পর সাংবাদিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। এদিকে পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর ন্যক্কারজনক পুলিশি হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা। পৃথক বিবৃতিতে তারা হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলকব্যবস্থা নিয়ে মুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিতের দাবি জানান।
হরতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরেজমিন সেখানে অবস্থানকালে দেখা যায়, পুলিশ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ কার্যালয়ে ঢুকতে গেলেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় মহিলা দলের সভাপতি নূরী আরা সাফা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় নূরী আরা সাফা রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে সাংবাদিকরা তার ছবি তুলতে যান। একপর্যায়ে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট ফটোসাংবাদিক ও কালের কণ্ঠের প্রবীণ ফটোসাংবাদিক রফিকুর রহমান রেকু, চ্যানেল আই’র ক্যামেরা সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু, এটিএন বাংলার মহসিন হোসেন, এনটিভির অজিত আইস তাপস ও দেশটিভির শিবলী আহত হন।
হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করে সাংবাদিকরা বিএনপি অফিসের সামনের সড়কে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তৃতা করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রশিক্ষণ সম্পাদক মশিউর রহমান, নির্বাহী সদস্য ও বাংলা ভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ইলিয়াস হোসেন, ক্রাব নেতা প্যাট্রিক ডি কস্তা, এটিএন নিউজয়ের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এইচএম সাগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার চয়ন রহমান, এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মইনুল আহসান, বৈশাখী টিভির সিনিয়র রিপোর্টার শফিক আহমেদ, নিউ এজ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার তাইয়্যেব আহমেদ, আমাদের সময়ের মামুন স্ট্যালিন, দিগন্ত টিভির আযম বিপু প্রমুখ। সকাল ১১টার সময় র্যাব-৩-এর একজন কর্মকর্তা রাস্তা থেকে সাংবাদিকদের সরে যাওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনারা এখান থেকে সরে না গেলে লাঠিপেটা করা হবে। এতে আরও উত্তেজনা দেখা দেয়।’ সকাল সাড়ে ১১টায় ডিবির এডিসি মোল্লা নজরুল ইসলাম একদফা সাংবাদিকদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালালেও তাতে সফল হননি। পরে মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করেন। বেলা ২টার দিকে সাংবাদিকরা অবস্থান ধর্মঘট শেষ করেন।
এদিকে এফডিসি’র সামনে দিয়ে আসার সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক আবু সালেহের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। সাংবাদিক পরিচয় ও পরিচয় পত্র দেখানো সত্ত্বেও পুলিশ তাকে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। তাকে অচেতন অবস্থায় রাজধানীর আদদ্বীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাংবাদিক নেতাদের উদ্বেগ : পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছেন সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতারা। তারা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) পৃথক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও মহাসচিব শওকত মাহমুদ এবং ডিইউজে সভাপতি আবদুস শহিদ ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দল আহূত ৩৬ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিনে গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার রিপোর্টার, ক্যামেরাম্যান ও ফটো সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় পরিচয় নিশ্চিত হয়েও পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। সেখানে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অন্তত ৬ সাংবাদিক আহত হন। কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। উল্টো তারা সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসেন এবং অশোভন ভাষা ব্যবহার করেন। এদিকে এফডিসির সামনে দিয়ে আসার সময় পুলিশ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি বিশিষ্ট ছড়াকার আবু সালেহ’র ওপর হামলা চালায়। সাংবাদিক পরিচয় দেয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। এই প্রবীণ সাংবাদিকের ওপর এমনভাবে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় যে তাকে অচেতন অবস্থায় রাজধানীর আদদ্বীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সাংবাদিক নেতারা বলেন, এ ব্যাপারে বারবার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও অব্যাহতভাবে পুলিশ সাংবাদিকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। তারা সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করছে এবং সাংবাদিকদের শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ব্যাহত হবে, যা গণতন্ত্রের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি তারা দাবি জানান। সাংবাদিক নেতারা ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ ও পুলিশ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের আইনানুগ শাস্তি প্রদানের দাবি জানান। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ তাদের বিবৃতিতে বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হরতালকে কেন্দ্র করে এমন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, যা কাম্য নয়। গতকাল হরতাল চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নয়াপল্টনে পুলিশের হামলার শিকার হন বিশিষ্ট ফটোসাংবাদিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিক রফিকুর রহমান রেকু, চ্যানেল আই’র ক্যামেরা সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু, এনটিভির ক্যামেরা সাংবাদিক অজিত আইস বাবু, এটিএন বাংলার ক্যামেরা সাংবাদিক মহসীন হোসেন, দেশ টিভির ক্যামেরা সাংবাদিক শিবলি আহমেদ এবং এফডিসির সামনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক আবু সালেহ। পেশাগত দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের ওপরে পুলিশের বেপরোয়া হামলায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিকাশ প্রক্রিয়ার ধারায় এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। আমরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতনকারী পুশিলসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বিরত ও সংযত আচরণ করার আহ্বান জানাই।
সাংবাদিক নেতাদের সংহতি : নয়াপল্টনে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশের) সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সূর্য, ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি ফখরুল আলম কাঞ্চন, আকতারুজ্জামান লাভলু, সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ আকন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর-এর সিনিয়র রিপোর্টার সুমন মাহমুদ, সকালের খবরের রেজাউল করিম লাভলু, বার্তা২৪ ডটনেটের মহসিন হোসেন, মাই টিভির মিরাজ হোসেন গাজী, সংবাদ-এর চিফ রিপোর্টার আবদুস সালাম, আমার দেশ-এর বাছির জামাল, প্রথম আলোর সেলিম জাহিদ, কালের কণ্ঠের মোস্তাক আহমেদ, জনকণ্ঠের শরিফুল ইসলাম, কালের কণ্ঠের সফিক সাফি, সমকালের হাসান শিপলু, আমাদের সময়ের তারেক সালমান, ইনকিলাবের আফজাল বারী, সংবাদের ওমর ফারুক, যুগান্তরের হাবিবুর রহমান খান, নয়া দিগন্তের মঈন উদ্দিন খান, সংগ্রামের আবু জাফর, চ্যানেল আই’র রেজোয়ান কাদের কচি, বৈশাখী টিভির কিশোয়ার লায়লা, রেডিও আমার-এর ফারাহ, পিটিভি নিউজের আলমগীর হান্নান, ডেইলি স্টারের সুমন, বাংলা নিউজের চিফ রিপোর্টার আহমেদ রাজু, ইনডিপেন্ডেন্টের রয়েল, গণকণ্ঠের কামরুল হাসান, জনপদের সাহানুজ্জামান টিটু, ভোরের কাগজের কাওসার মাহমুদ, বাংলা ভিশনের জাহাঙ্গীর আকন, শীর্ষ নিউজের খালিদ হোসেন, এটিএন নিউজের জাবেদ আখতার, মোহনা টিভির সফিক, ইসলামিক টিভির রুবেল, দিনকালের আরিফুজ্জামান মামুন, দেশ টিভির আতিকুর রহমান পুর্নিয়া, মহসিনুল করিম বাদল, আরটিভির ইকবাল আহমেদ প্রমুখ।
  • প্রথম পাতা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন