রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১১

চিরনিন্দ্রায় শায়িত কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ

চিরনিন্দ্রায় শায়িত কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ নিজস্ব প্রতিবেদককবি-প্রাবন্ধিক-গবেষক-গল্পকার আবদুল মান্নান সৈয়দকে গতকাল বিকাল তিনটার দিকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ সময় তথ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, কবির স্ত্রী সায়রা সৈয়দ, একমাত্র মেয়ে জিনান শম্পা, জামাতা মোহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, সৈয়দ শামসুল হক, খিলখিল কাজী, ক্যামেলিয়া মুস্তাফাসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রয়াত এই সাহিত্যিকের কুলখানি আজ বাদ-আসর গ্রিনরোডের ৫১/৫২ সুবাস্তু এডিসি টাওয়ারের মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তার জামাতা। এর আগে তিনটি নামাজে জানাজা শেষে তার কফিন আজিমপুরে নিয়ে আসা হয়। প্রথম জানাজা গ্রিনরোড মসজিদে, দ্বিতীয় জানাজা বাংলা একাডেমীতে এবং সর্বশেষটি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। এর আগে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধানিবেদনের জন্য প্রয়াত কবির কফিন বাংলা একাডেমীতে নজরুল মঞ্চে রাখা হয়। সেখানে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে কবি-সাহিত্যিকসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ জড়ো হন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমী, নজরুল ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে আবদুল মান্নান সৈয়দের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে সেখানে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা হয়। এতে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ, অধ্যাপক মনসুর মুসা, কবি সৈয়দ শামসুল হক, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কবি বেলাল চৌধুরী, এখলাসউদ্দিন, আবু সালেহ, আবদুল হাই শিকদারসহ শিল্পী-কবি-সাহিত্যিকরা অংশ নেন। পরে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মুনাজাত করা হয়। বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর বিকালে একাডেমী চত্বরে আবদুল মান্নান সৈয়দ স্মরণে নাগরিক শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে।বাদজোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দ্বিতীয় জানাজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বাংলা বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে তার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
রবিবার সন্ধ্যায় ইফতারের সময় অসুস্থবোধ করায় ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেওয়ার পথে আবদুল মান্নান সৈয়দের (৬৭) মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। ল্যাবএইড থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তার মরদেহ গ্রিনরোডের বাসভবনে নেওয়া হয়। পরে রাতে মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে সকালে নেওয়া হয় গ্রিনরোড মসজিদে। আবদুল মান্নান সৈয়দের জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের চবি্বশ পরগনায়। ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে প্রবেশিকা ও ১৯৬০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক সম্মান ও ১৯৬৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে তিনি জগন্নাথ কলেজে অধ্যাপনা এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবদুল মান্নান সৈয়দ বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, নজরুল পদক, কবি তালিম হোসেন পুরস্কার, লেখিকা সংঘ পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে_ জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ, জ্যোৎস্না রৌদ্রের চিকিৎসা, সংবেদন ও জলতরঙ্গ, নির্বাচিত কবিতা, পরাবাস্তব কবিতা, পার্ক স্ট্রিটে এক রাত্রি, মাছ সিরিজ, আমার সনেট। প্রবন্ধ-গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে_ শুদ্ধতম কবি, জীবনানন্দ দাশের কবিতা, নির্বাচিত প্রবন্ধ, নজরুল ইসলাম : কবি ও কবিতা, করতলে মহাদেশ, দশ দিগন্তে দ্রষ্টা, বেগম রোকেয়া, আমার বিশ্বাস, ছন্দ, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, সৈয়দ মুর্তাজা আলী, ফররুখ আহমদ ইত্যাদি। ছোটগল্পের মধ্যে আছে_ সত্যের মতো বদমাশ, চলো যাই পরোক্ষে, মৃত্যুর অধিক লাল ক্ষুধা, নেকড়ে হায়েনা আর তিন পরী ইত্যাদি। তার রচিত কয়েকটি উপন্যাস হলো_ পরিপ্রেক্ষিতের দাসদাসী, কলকাতা, পোড়ামাটির কাজ, অ-তে অজগর, হে সংসার হে লতা, ক্ষুধা প্রেম আগুন ইত্যাদি। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ও তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ পৃথক বাণীতে আবদুল মান্নান সৈয়দের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন