সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১১

১৫ জুনের মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সকল হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার করতে হবে


বিএফইউজে-ডিইউজে'র মহাসমাবেশে আল্টিমেটাম
১৫ জুনের মধ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সকল হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার করতে হবে
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সারাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিএফইউজে-ডিইউজে আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন -সংগ্রাম
স্টাফ রিপোর্টার : আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদসহ দেশব্যাপী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও নির্যাতনকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। তারা আগামী ১৫ জুনের মধ্যে এ দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, অন্যথায় ১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবসে চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সারাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে অনুষ্�� িত এক মহাসমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ আল্টিমেটাম দেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করে। বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্�� ানে প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইনের পরিচালনায় মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদ, জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিএফইউজে'র সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। এ সময়ের আলোচিত ব্যক্তিত্ব আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ডিইউজে সভাপতি আব্দুস শহিদ এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন সবুজ। সংহতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটির ভাইস- চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. কোরবান আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন, ঢাবি সাদা দলের যুগ্ম-আহবায়ক অধ্যাপক ড. আমিনুর রহমান মজুমদার, জাতীয় পেশাজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক সচিব সোলায়মান চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, ড্যাব মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সম্মিলিত পেশাজীবী ফোরামের মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম-আহবায়ক এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট খুরশীদ আলম, ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) যুগ্ম-আহবায়ক রিয়াজুল ইসলাম, এগ্রিকালচারারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্য সচিব হাসান জাকির তুহিন প্রমুখ। সাংবাদিক মহাসমাবেশের ৯ দফা ঘোষণা পা�� করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি বর্তমান সরকারের আক্রোশের আরেক শিকার শওকত মাহমুদ এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সূচনা বক্তব্য দেন বিএফইউজে মহাসচিব এমএ আজিজ।
মহাসমাবেশে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনা, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, কুমিল্লা সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ইউনিয়নের কক্সবাজার ছাড়াও শাখা সাংবাদিক সমিতি, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনসহ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের নেতা ও সদস্যবৃন্দ যোগ দেন। এদের মধ্যে দু'শতাধিক সাংবাদিক বর্তমান সরকারের গত ১৫ মাসে মন্ত্রী-এমপি দলীয় নেতা-কর্মীদের হাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জাতীয় সংবাদ সংস্থা বাসস'র চাকরিচ্যুত সাংবাদিক বিশিষ্ট ছড়াকার আবু সালেহ, আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি এম আব্দুল্লাহ, প্রথম আলোর গৌরীপুর প্রতিনিধি সুপ্রিয় ধর, যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক লোক সমাজের শার্শা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনি, বাসস'র বরখাস্তকৃত মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি মনজুর মোরশেদ প্রমুখের নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনাকালে উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি মুছেছেন। অনুষ্�� ানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মীর আহাম্মদ মীরু, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন মঈন, নির্যাতন প্রতিরোধ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল কবির রেজা, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির মহাসচিব দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
প্রধান অতিথি এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এ সরকারের আমলে শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ মানুষও নির্যাতনের শিকার। আইনজীবীরা আপনাদের সহযোদ্ধা। যেখানেই নির্যাতন, মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটুক আমরা আইনী লড়াইয়ের সহায়তা করবো। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ নয়, প্রতিঘাত চাই।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের কবর রচনা করে বাকশাল গ�� ন করেছিলেন। আজ যারা আওয়ামী লীগ করেন তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করেন না। তারা বঙ্গবন্ধুর লাশ বিক্রি করে ফায়দা লুটছেন। এ লাশ বিক্রি করে বেশি দিন টিকে থাকা যাবে না।
স্বনামধন্য সাংবাদিক আতাউস সামাদ বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের জবাব এই সমাবেশ। এরপর থেকে যখনই নির্যাতন হবে তখনই সারাদেশে প্রতিবাদ করতে হবে। এ সরকারের আমলে গফরগাঁও থেকে সাংবাদিক নির্যাতন শুরু হয়।

সাংবাদিক মহাসমাবেশে
গৃহীত ঘোষণাপত্রের
পূর্ণ বিবরণ
স্টাফ রিপোর্টার : গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সারাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে অনুষ্�� িত মহাসমাবেশে সর্বসম্মতিক্রমে ৯ দফা ঘোষণা গৃহীত হয়। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যৌথ আয়োজনে অনুষ্�� ানে ঘোষণাপত্রটি পা�� করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদ। ঘোষণাপত্রটি দৈনিক সংগ্রামের পা�� কদের জন্য নিম্নে পত্রস্থ করা হলো ঃ
উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে সদা-সোচ্চার যে জনগোষ্�� ী; ভাষা, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার মহান যুদ্ধে বিজয়ী যে জনগণ; গণতন্ত্র, বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল আন্দোলনে অদম্য যে জাতিঃ তার সেই অগ্রবর্তী অংশ, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পাহারা দিয়ে চলেছেন, বাংলাদেশের সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ তথা জনমতের প্রতিনিধিবর্গ মানবতার পূর্ণাধিকার প্রতিষ্�� ার লক্ষ্যে মহাসমাবেশে সমবেত হয়ে দৃঢ়কণ্�� ে ঘোষণা করছেন যে, ১. অগণতান্ত্রিক দুঃশাসনের সর্বব্যাপী বিস্তারে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, মৌলিক ও মানবাধিকার আজ চরমভাবে বিপন্ন। বর্তমান মহাজোট তথা আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ মাসে রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী নতজানু বৈদেশিক চুক্তি সম্পাদন, সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর নির্বিচারে বাংলাদেশী হত্যা, তথাকথিত জঙ্গিবাদ দমনের নামে ধর্মপ্রাণ ও শান্তিপ্রিয় জনগোষ্�� ীর প্রান্তিকীকরণ, ৫৬ জন বীর সেনা কর্মকর্তাকে নিষ্�� ুর হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে দেয়া, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অপদখল, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দেশ বিনাশী ষড়যন্ত্রসহ নানা ইস্যু যেমন নিরতিশয় উদ্বেগের কারণ-তেমনি সরকারের অপশাসন, সংবিধানের যথেচ্ছ লঙ্ঘন, আইন-শৃক্মখলা রক্ষায় চরম ব্যর্থতা, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশকে নজিরবিহীন বিপর্যয় ও সংকটে পতিত করেছে। নির্লজ্জ দলীয়করণ, আক্রোশ, প্রতিহিংসা ও একদেশদর্শিতার কারণে রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ যথাক্রমে আইন প্রণয়ন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ অকার্যকর হয়ে পড়ার পথে।
মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন ও নিষণ দুঃসহ মাত্রায় উপনীত। বিরোধী দল বিনাশের অপপ্রয়াসে গণতন্ত্রের মোড়কে একদলীয় বাকশাল শাসনের পদধ্বনি স্পষ্ট। তথ্য-সন্ত্রাস আজ সর্বগ্রাসী। তথ্যের বর্তমান সংজ্ঞা যেন হচ্ছে, ‘তথ্য হলো এমন বস্তু যা অপরকে ঘায়েল করার জন্য জড়ো করা হয় এবং নিজেদের বাঁচানোর জন্য অদৃশ্য করা যায় অথবা ঘুলিয়ে দেয়া যায়।' সামাজিক বা নৈতিক দায়িত্ববোধকে পদদলিত করে অস্থিরতা, জিঘাংসা, ঘৃণা উস্কে দিতে চমকে দেয়া তথ্যের পুরিয়া যেন ক্ষমতাসীনদের একমাত্র অবলম্বন। অমানবিক নিষ্�� ুরতা প্রদর্শিত হচ্ছে বুক ফুলিয়ে, সরকারের উন্মত্ত প্রতিক্রিয়া ও ফ্যাসিবাদী মনোভাব আজ গণতন্ত্রের আত্মাকে নির্জীব করে তুলেছে।
২. এই মহাসমাবেশ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে, জগদ্বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী রোমাঁ রোলাঁ এবং অাঁরি বারব্যুসকে, যারা ১৯২৭ সালে ‘মুক্ত মানবাত্মার নিকট আবেদন' শীর্ষক এক খোলা চি�� িতে বিশ্বকে বলেছিলেন, ‘আমরা সর্বত্র লক্ষ্য করছি, ফ্যাসিবাদের নামে স্বাধীনতার সমস্ত বিজয়ীকে হয় ধ্বংস নতুবা বিপদাপন্ন করা হচ্ছে। সংগ�� ন গড়ার অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ ও বিবেকের স্বাধীনতা, যা শত শত বছরের আত্মত্যাগ ও আয়াসে অর্জিত হয়েছে, আজ সেসব কিছুকেই নির্দয়ভাবে নির্মূল করা হচ্ছে। প্রগতির এই দেউলিয়া অবস্থায় আমরা আর নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারি না। নিষ্ক্রিয় ও পক্ষপাতশূন্য থাকা আর নিরাপদ নয়।' আমরা অমলিন অনুভবে আজকে আশ্রয় নিতে চাই আমাদের পূর্বসূরী প্রখ্যাত লেখক-রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের সেই উক্তিতে, যা তিনি উচ্চারণ করেছিলেন ১৯৪৪ সালে ফ্যাসিস্তবিরোধী সাংবাদিক-লেখক ও শিল্পী সংঘের দ্বিতীয় সম্মেলনে। তিনি বলেছিলেন, ‘সাংবাদিক, লেখক ও শিল্পী আকাশচারী হইতে পারে না, দেশবাসীর চিন্তা ও কল্যাণবোধই শিল্পীর চিন্তাধারাকে রূপায়িত করিয়া তোলে। ভারতের হিন্দু ও মুসলমানের জীবনাদর্শের এবং ঐতিহাসিক শিক্ষা ফ্যাসিজমের বিরোধী। কাজেই ফ্যাসিস্ট বিরোধিতা একটি নেতিবাচক ভাববিলাসিতা নহে। ইহার মধ্যে আমাদের জীবনের যোগ আছে।'
৩. এই মহাসমাবেশের দৃঢ় ও গভীর উপলব্ধি হচ্ছে, আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির শোচনীয় ক্রমাবনতি, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসের দুর্বিষহ সঙ্কট, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, সরকারি পেটোয়া বাহিনীর নজিরবিহীন টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের নারকীয় সন্ত্রাস, উন্মত্ত নারী নির্যাতন এবং আইনের শাসনের দুর্ভিক্ষাবস্থায় জীবন যাপন যেমনি অসহনীয়, তেমনি বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্র, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং পরোক্ষ মতপ্রকাশের অধিকার সরকারের রক্তচক্ষুতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কবিতার জন্য সচিব আবু করিম চাকরি হারিয়েছেন। ক্রসফায়ারের ওপর দৃক গ্যালারির আলোকচিত্র প্রদর্শনী পুলিশী বাধায় পড়েছে। মুদ্রণ ও বৈদদ্যুতিক গণমাধ্যমে বর্তমানে নানারকমের পরোক্ষ সেন্সরশীপ চলছে। দৈনিক আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, দিনকাল, সংগ্রাম, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, যমুনা টিভিসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের ওপর সরকারের সহিংস অসহিষ্ণুতা ক্রমাগত আছড়ে পড়েছে। ঢাকার বাইরের পত্রিকাগুলোও নানা হুমকিতে রয়েছে। নানা চ্যানেলের টক-শোতে আলোচক নির্বাচন সরকারি নিয়ন্ত্রণের শিকার। সিএসবি চ্যানেলের ওপর ফখরুদ্দিন- মইনউদ্দিনের অবৈধ শাসনের নিষেধাজ্ঞা এখনও বলবৎ। ১/১১'র অসাংবিধানিক অগণতান্ত্রিক সরকারের আমলে সংবাদপত্র ও সাংবাদিক সমাজের ওপর ডিজিএফআই নামক গোয়েন্দা সংস্থার নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারী কার্যক্রম আজও অব্যাহত। সাংবাদিক নির্যাতনকারী সেইসব কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের আমলেও বহাল থেকে পরোক্ষ সেন্সরশীপের এবং সাংবাদিক পীড়নের অপতৎপরতা নতুন মাত্রা ও আঙ্গিকে আরও বৃদ্ধি করে চলেছে। তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করে বর্তমান সরকার সাধুবাদ প্রাপ্য হয়েছিল, কিন্তু গত ১৫ মাসে তা বাস্তবে কার্যকর না হওয়ায় এবং সরকার কর্তৃক তা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা অবলম্বন করায় আইনটি ইতোমধ্যেই প্রহসনে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রধান তথ্য কর্মকতা আমলাতন্ত্রের কাছে চি�� ি পা�� িয়ে তথ্য সরবরাহ না করার নির্দেশ দিয়ে তথ্য প্রাপ্তির অধিকারের আগাম ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। সংসদে সাংবাদিকদের চরিত্র হনন নিত্যকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা মানবসমাজের অন্যতম সাধনা হলেও, সেই স্বাধীনতার কণ্�� রোধ প্রতিদিন প্রবল হয়ে উ�� ছে।
৪. এই মহাসমাবেশ গভীর উৎকণ্�� ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ করছে যে, গত ১৫ মাসে দেশব্যাপী সাংবাদিক নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নির্যাতিত সাংবাদিকদের সংখ্যা সহস্রাধিক। সাংবাদিকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শাসকদলীয় এমপি ও ক্যাডারদের হাতে নির্যাতিত হয়ে চলেছেন। গত ১৫ মাসে নিহত হয়েছেন চারজন সাংবাদিক। শুধুমাত্র খবর প্রকাশ নয়, তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দল-মত নির্বিশেষে সাংবাদিকরা উৎপীড়িত নির্যাতিত হচ্ছেন শাসক দলীয় এমপি ও ক্যাডারদের হাতে। কিন্তু পুলিশ থাকছে নির্বিকার। সম্প্রতি টঙ্গীতে খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের পুলিশের সামনেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বেদম পিটিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের হেনস্তা করা হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যশোরে ‘লোক সমাজ' এর শার্শা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনিকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে আহত করা হয়েছে। ময়মনসিংহে গৌরীপুরে পূজামন্ডপ থেকে ‘প্রথম আলো'র প্রতিনিধিকে সুপ্রিয় ধরকে ধরে নিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। গফরগাঁওয়ে ‘সমকাল' এর সংবাদদাতা আল আমিন বিপ্লবকে ভয়ানক জখম করেছে এমপির ক্যাডাররা। পটুয়াখালীর গলাচিপায় জাতীয় দৈনিকগুলোর সংবাদদাতাদের অমানবিক নির্যাতন করেছে স্থানীয় এমপির পোষ্য গুন্ডারা। শাস্তির বদলে সেই এমপিকে প্রেস কাউন্সিলে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। নরসিংদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদককে খোদ টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন। পরিবারসহ সাংবাদিককে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেয়া হচ্ছে। রংপুরে একটি উপজেলায় সকল সাংবাদিক নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছেন। এমনি আরও অনেক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে। গফরগাঁও, গৌরীপুর, গলাচিপা, কুষ্টিয়া, শার্শা, টেকনাফ-এর সংসদ সদস্যরা সাংবাদিক নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গণমাধ্যমের দুশমন বলে চিহ্নিত হয়েছেন। একই সঙ্গে অবর্ণনীয় রোষ ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন আমার দেশ এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বিশেষ প্রতিনিধি এম আবদুল্লাহ। তাদের বিরুদ্ধে তিনবার সশস্ত্র হামলা ও ২৭টি মামলা দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক হানিফ ‘রাস্তায় বের হতে না দেয়া'র হুমকি উচ্চারণ করে সংবাদ মাধ্যমের বৈরী শক্তি হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের নির্দেশে দুদক এখন মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলে পড়েছে। সুদূর লন্ডনেও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার প্রাণনাশের অপচেষ্টা করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সম্প্রতি বরেণ্য সাংবাদিক আতাউস সামাদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে গণধিকৃত হয়েছেন। ‘নিউএজ' পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এই পত্রিকার রিপোর্টার এ এফ এম মাসুমকে র্যা ব অমানুষিক নির্যাতন করেছে। ‘আমাদের সময়' সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানও হত্যার হুমকি পেয়েছেন। জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি শওকত মাহমুদের বাক-স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণের হুমকি এবং তার বিরুদ্ধে একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হচ্ছে। এই মহাসমাবেশে এইসব ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, হুমকি ও দেশব্যাপী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সকল হয়রানিমূলক মামলার প্রত্যাহার, নির্যাতনে নিহত ও আহত সকল সাংবাদিকের ক্ষতিপূরণ এবং হত্যা হামলার বিচার এবং নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার দাবি করছে। দীর্ঘদিন ধরে অনিন্ন সাংবাদিক হত্যার বিচার নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাচ্ছে।
৫. সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নসহ সকল মিডিয়ার ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ তুলে নেবার জোর দাবি জানাচ্ছে। গণতন্ত্রের বিকাশের স্বার্থেই এ দাবি বাস্তবায়ন জরুরি।
৬. ভিন্নমতের কারণে বিটিভি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, বাংলাদেশ বেতারসহ নানা সংস্থায় সাংবাদিকদের চলমান চাকরিচ্যুতি ও হয়রানিমূলক বদলির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে এই সাংবাদিক মহাসমাবেশ। একই সঙ্গে এসব অন্যায় ও প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ গ্রহণে বিরত থাকার আহবান জানানো হচ্ছে।
৭. এই মহাসমাবেশ সপ্তম ওয়েজবোর্ড পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন এবং মফস্বল সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন কা�� ামোতে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানাচ্ছে। টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য পৃথক বেতন বোর্ড প্রবর্তনও আজ সময়ের দাবি। একই সঙ্গে সংবাদপত্রকে শিল্প হিসাবে মর্যাদা দান এবং শ্রম আইন সংশোধনপূর্বক সাংবাদিকদের আইনগত মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্�� ার তাগিদ দিচ্ছে এই মহাসমাবেশ।
৮. এই সাংবাদিক জমায়েত সিলেট প্রেসক্লাব, নরসিংদী প্রেসক্লাব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ক্লাব অপদখলের চেষ্টা এবং ছাত্রলীগ কর্তৃক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দেয়া এবং পাবনা প্রেসক্লাবে ছাত্রলীগের ভাংচুরের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। জেলা প্রশাসক কর্তৃক বেআইনিভাবে নরসিংদী প্রেসক্লাবের নির্বাচিত কমিটি ভেঙে দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সাংবাদিকদের সকল প্রতিষ্�� ানের নির্বাচিত কমিটিকে পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছে।
৯. এই মহাসমাবেশ সুক�� িন প্রত্যয়ে সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চায়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদ প্রকাশের অধিকার একটি জাতির আত্মসম্মান প্রতিষ্�� ার অপরিহার্য অবলম্বন। কবি রবীন্দ্রনাথ �� াকুর বলেছিলেন, ‘সিপাহী বিদ্রোহের পূর্বে হাতে হাতে যে রুটি বিলি হইয়াছিল তাহাতে একটি অক্ষরও লেখা ছিল না- সেই নির্বাক নিরক্ষর সংবাদপত্রই কি যথার্থ ভয়ঙ্কর নহে। সর্পের গতি গোপন এবং দংশন নিঃশব্দ, সেই জন্যই কি তাহা নিদারুণ নহে? সংবাদপত্র যতই অধিক এবং যতই অবাধ হইবে, স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে দেশ ততই আত্মগোপন করিতে পারিবে না।'
কলম সৈনিকদের প্রতি আহবান জানিয়ে ১৯২২ সালে ধূমকেতু পত্রিকার সম্পাদক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (নিশান-বরদার) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছিলেন, ‘আমাদের বিজয় পতাকা তুলে ধরবার জন্য এসো সৈনিক।...... বল আমরা পেছোব না। বল আমি আছি আমি পুরুষোত্তম জয়। বল মাভৈঃ মাভৈঃ জয় সত্যের জয়। এই কথা বলে বেরিয়ে এসো- আমি আছি, আমাতে আমিত্ব আছে, আমি পশু নই, আমি মনুষ্য, আমি পুরুষসিংহ। আমাদের বিজয়ী হতে হবে।'
স্বাধীন সংবাদপত্র, নির্যাতনমুক্ত সাংবাদিক সমাজ ও অধিকারে বলীয়ান জনসমাজ অর্জনে চাই সুক�� িন ঐক্য। যারা এখনও সাংবাদিক-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার নন, আসুন সবাই মিলে গণতন্ত্রের জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিষ্�� ার জন্য, সাংবাদিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হই। আসুন মানবাত্মার নবজাগরণে উত্থিত হই।

তৃণমূল সাংবাদিকদের মুখে
নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা!
স্টাফ রিপোর্টার : দেশব্যাপী সাংবাদিক নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মহাজোট সরকারের গত ১৫ মাসে সাংবাদিক খুন হয়েছেন ৪ জন। নির্যাতিত হয়েছেন আরও সহস্রাধিক। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের প্রত্যক্ষ মদদে তাদের পেটোয়া বাহিনী একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতন করলেও প্রশাসন রয়েছে সম্পূর্ণ নীরব। এজন্যে দেয়ালে পি�� �� েকে যাওয়া সাংবাদিকরাই সাংবাদিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। গতকাল শনিবার তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সারাদেশের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি আওয়ামী সরকারের গত ১৫ মাসে সন্ত্রাসীদের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার দু'শতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন নিজেদের ওপর ঘটে যাওয়া ছাত্রলীগ যুবলীগ সন্ত্রাসীদের পৈশাচিক নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরেন। তাদের এসব কাহিনী শুনে সমাবেশে উপস্থিত সবাই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
ছড়াকার আবু ছালেহ বলেন, ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী সরকারের পেটোয়া বাহিনী তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও অফিসের চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করেই শুধু ক্ষান্ত হয়নি শেষে তাকে বাসস থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমার দেশের বিশেষ প্রতিনিধি এম আব্দুল্লাহ বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর আমার দেশ পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক এলাহী ও প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে শেভরন কোম্পানির কাছ থেকে ৩৭০ কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তাদের প্রতিবাদও একই জায়গায় বৃহৎ আকারে ছাপানো হয়। যা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। নিয়মানুযায়ী দরপত্র আহবান না করে শেভরন কোম্পানিকে কাজ দেয়ার এ অনিয়মের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানানোর আর কোন ভাষা না থাকায় তারা আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। সন্ত্রাসীরা টঙ্গীর বাসা থেকে ঢাকার অফিসে আসার সময় তারা আমার গাড়িতে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইট নিক্ষেপ করে। এতে গাড়ির কাচ ভেঙ্গে ইট আমার পি�� ে আঘাত করে। পরে দৌড়ে আমি প্রাণে বাঁচলেও তারা ড্রাইভারকে মারধর করে। এ ঘটনার পর আমার ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে ২৫টি মামলা করেছে। তারপরও যত মামলাই হোক আমরা সত্য লিখবই।
প্রথম আলোর বরিশালের গৌরীপুর প্রতিনিধি সুপ্রীয় ধর তার ওপর অত্যাচার নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকিরকে গত বছরের ৮ আগস্ট এলাকার সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ জন্য ৫শ' গেট নির্মাণ ও ১ হাজার গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এ খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলেও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর চাপে থানা মামলা নিতে গড়িমসি করে। গত ২৭ মার্চ একইভাবে প্রতিমন্ত্রী এলাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্�� ানে প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এ খবর প্রথম আলো অফিসে পা�� ালেও তা ছাপা হয়নি। প্রতিমন্ত্রী বলে বেড়ান প্রথম আলো অফিসে তার লোক রয়েছে। তিনি আবেগ আপ্লুত কণ্�� ে বলেন, স্বাধীন দেশে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখবে আর তার প্রতিবাদ হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সাংবাদিক নির্যাতনের এ রকম ঘটনা কোন ধরনের স্বৈরাচারী মনোভাব?
বরিশালের গলাচিপার সাংবাদিক সাইমন রহমান এলিট আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হুমকি, মামলা এবং বাড়িতে ওষুধ নিয়ে যেতে বাধা দেয়ায় তার সবচেয়ে প্রিয়জন মা মারা গেছেন উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনি ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় তারা আমার নামে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দেয়। রাত সাড়ে ১২টার সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িতে এসে চিৎকার করতে থাকে। হাত-পা ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় আমার মা স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে আড়াই মাস ঢাকায় অবস্থান করতে বাধ্য হই। পরে জামিন নিয়ে বাড়িতে গেলে সন্ত্রাসীরা আবারো আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এজন্যে আমার মা দ্বিতীয় বার স্ট্রোক করেন। কিন্তু তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে পারিনি। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বাড়িতে আমার মায়ের জন্য ওষুধও নিতে দেয়নি। এজন্যে ধীরে ধীরে রোগে ভুগে আমার মা মারা যান। কান্নাজড়িত কণ্�� ে তিনি বলেন, এসব হামলা, মামলা নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারলে আমার মায়ের আত্মা শান্তি পাবে না।
যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক লোকসমাজের শার্শা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনি তার ওপর নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরতে গিয়ে স্বজোরে কেঁদে ও�� েন। তিনি বলেন, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাকে হুমকি দেয়া শুরু হয়। কয়েক দফা হামলা করে স্থানীয় এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের আশ্রিত গুন্ডাবাহিনী। এজন্যে বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান নিতে বাধ্য হন। তবে তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। খবর পেয়ে সন্ত্রাসীরা সেখানেও সশস্ত্র হামলা চালায়। তার কোলে থাকা ৪ বছরের সন্তানকে সন্ত্রাসীরা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এরপর তার ওপর হাতুড়ি দিয়ে শুরু হয় নির্মম নির্যাতন। মাথা ও শরীরের প্রতিটি গিরায় গিরায় আঘাতের পর অজ্ঞান হয়ে গেলে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় সন্ত্রাসীরা। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর কোন রকমে সুস্থ হয়ে উ�� লেও এখনো ব্যথার যন্ত্রণায় মাঝে মাঝেই কুঁকড়ে ও�� েন।
সমাবেশে এমনইভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক এম বোখারী আজাদ তার নিজেরসহ ক্যাম্পাসের ৪২ সাংবাদিকের নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরেন। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলা, মামলা ও হুমকির কথা আরো তুলে ধরেন রংপুরের সাংবাদিক সালেকুজ্জামান, মাযহারুল মান্নান, ময়মনসিংহের সাইফুল ইসলাম, ফরিদপুরের আরিফ ইসলাম, মুন্সিগঞ্জের মঞ্জুর মোর্শেদ, চাঁদপুরের বি এম হান্নানসহ আরও অনেকে। তাদের অধিকাংশই নিজেদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় অবিশ্বাসী জুলুমবাদ সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন