ঢাকা, নভেম্বর ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসনে দেশ 'স্থবির' হয়ে গেছে অভিযোগ করে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশের মানুষ দুঃখ-কষ্ট আর বেদনার মধ্যে দিয়ে এবারের ঈদ উদযাপন করছে। আর জনগণ খারাপ থাকলে তারও ভালো থাকার কথা নয়।
সোমবার ঈদুল আজহার দুপুরে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "সরকারকে বলব- এখনো সময় আছে- নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করুন।"
রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন লেডিস ক্লাবে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দলের নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিয়ম করেন বিরোধী দলীয় নেতা। এরপর তিনি শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে যান।
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "দেশের মানুষ দুঃখ-কষ্ট আর বেদনার মধ্যে এবারের ঈদ উদযাপন করছেন। মানুষ দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারে না। তাদের কাছে ঈদের আনন্দ নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। এ জন্য মানুষের মনে এই ঈদের দিনেও শান্তি নাই।"
বিরোধী দলীয় নেতা অভিযোগ করেন, বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ঈদে ঘরমুখী মানুষ এবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বাড়ি পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লেগেছে তাদের।
দুই ছেলে ও পরিবারের সদস্যদের ছাড়া কেমন আছেন জানতে চাইলে খালেদা জিয়া বলেন, ''মোটামুটি। এখন আমি জনগণকে নিয়ে আছি। জনগণ খারাপ থাকলে আমারও ভালো থাকার কথা নয়।"
বিদেশে 'চিকিৎসাধীন' দুই ছেলের সঙ্গে রোববার কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, "তাদের ওখানে গতকালই ঈদ হয়ে গেছে। আমার কথা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। আগের তুলনায় তাদের অবস্থা ভালো। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে।"
খালেদা জিয়ার দুই ছেলের মধ্যে তারেক রহমান লন্ডন এবং আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ দিকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তারেক এবং প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কোকো চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। অবশ্য পরে অন্য মামলায় তাদের বিরুদ্ধে আবারো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপার্সন জানান, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করে দেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে জনমত তৈরির জন্য চলতি মাসের শেষ দিকে আবারো বিএনপির রোড মার্চ কর্মসূচি শুরু হবে। তবে সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
"রোড মার্চ কর্মসূচিগুলো বাকি রয়েছে। এসব শেষ হলে নতুন কর্মসূচি আপনারা জানতে পারবেন," যোগ করেন খালেদা।
ইতোমধ্যে ১০-১১ অক্টোবর সিলেট এবং ১৮-১৯ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে রোড মার্চ করেছে বিএনপি।
বর্তমান সরকারের অধীনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন 'খারাপ' হচ্ছে উল্লেখ করে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সব সময় বলেন, সর্বকালের ভালো আইনশৃঙ্খলা দেশে বিরাজমান। তিনি এ রকম কথা বলে আত্মতৃপ্তি পান। কিন্তু বাস্তবে হত্যা, গুপ্তহত্যা, খুন বাড়ছেই। জনগণের এখন কেনো নিরাপত্তা নেই।"
খালেদা জিয়া বলেন, "নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী না দিয়ে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সেনাবাহিনী দেয়নি বলে শেষমুহূর্তে আমাদের সমর্থিত প্রার্থী ভোট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। সেখানে একদলীয় নির্বাচন হয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন নিরপেক্ষ হয় না।"
গত ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার 'নেত্রীর' আদেশের কথা জানিয়ে ভোটের মাত্র ৭ ঘণ্টা আগে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
৭ নভেম্বরকে 'সিপাহী-জনতার বিপ্লবের দিন' অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, "ঈদের পাশাপাশি এটাও আমাদের জাতীয় জীবনে একটি খুশি দিন। এ দিনেই সৈনিক ও জনগণ এক হয়ে দেশ রক্ষা করেছিলো। যেভাবে একাত্তরে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো।"
দেশবাসীকে ৭ নভেম্বরের শুভেচ্ছাও জানান খালেদা জিয়া।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার পর হত্যাকারীদের 'উৎখাত করার' লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে একটি অভ্যুত্থান হয়। ওই সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াকে আটক করা হয়।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের ৭ নভেম্বর এক পাল্টা অভ্যুত্থানে জিয়াকে মুক্ত করেন। যাতে যুক্ত ছিলেন জাসদের নেতা-কর্মীরাও। অবশ্য পরে তাহেরকে সামরিক আদালতে 'বিচার' করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
রাজনৈতিক দলগুলো ৭ নভেম্বরকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ও চেতনায় পালন করে থাকে। বিএনপি 'জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস', আওয়ামী লীগ 'মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস' এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) 'সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান' দিবস হিসেবে দিনটি পালন করে।
গত মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকনকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, "মিথ্যা মামলায় খায়রুল কবীর খোকনকে আটক করে রেখেছে। খোকন সম্পূর্ণ নির্দোষ।"
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত লেডিস ক্লাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। প্রথমে তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত শাহের মোহাম্মদ, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আব্দুল¬াহ বিন নাসের আল বুসাইরি, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।
দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আর এ গণি, জমির উদ্দিন সরকার, এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী।
কূটনীতিকদের পর্ব শেষে বিশিষ্ট নাগরিক, দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে লেডিস ক্লাবে। তারা সারিবদ্ধভাবে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে শুভেচ্ছ বিনিময় করেন।
বিএনপির সহসভাপতি রাজিয়া ফয়েজ, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল হালিম ও জহুরুল ইসলামও চেয়ারপার্সনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রফিক-উল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক ইউসুফ হায়দার, এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ, সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, বিজেএমইএ সভাপতি সফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহফুজ উল্লাহ, আবু সালেহ, মাহমুদ শফিক, আবদুল হাই শিকদার, শিল্পী শবনম মুস্তারীসহ সাবেক সচিব, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ,অর্থনীতিবিদ,চিকিৎসক নেতারাও বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এছাড়া কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রাজ্জাক, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান খালেদার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএম/জেকে/১৫৫৫ ঘ.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন