বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১১

মানুষের মনে এই ঈদেও শান্তি নেই

শুভেচ্ছা বিনিময়কালে খালেদামানুষের মনে এই ঈদেও শান্তি নেই নিজস্ব প্রতিবেদক
সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে আবারও সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, এখনো সময় আছে_নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করুন। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন হলে তা দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই সরকারের উচিত, ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসনে দেশ 'স্থবির' হয়ে পড়েছে_অভিযোগ করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ দুঃখ-কষ্ট-বেদনার মধ্য দিয়ে ঈদ উদ্যাপন করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না। দেশের মানুষ খারাপ
থাকলে আমারও ভালো থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, মানুষ দুইবেলা পেট ভরে খেতে পারে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। এ জন্য মানুষের মনে এই ঈদের দিনেও শান্তি নেই।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত মঙ্গলবার ঈদের দিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন এসব কথা বলেন। তিনি প্রথমে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক ও পরে দেশের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দলীয় নেতা-কর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তিনি শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে খালেদা জিয়া আরো বলেন, বেহাল যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ঈদে ঘরমুখী মানুষ এবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বাড়ি পেঁৗছতে দীর্ঘ সময় লেগেছে তাদের।
খালেদা জিয়া বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করে দেওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে জনমত সৃষ্টির জন্য চলতি মাসের শেষ দিকে আবারও বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু হবে। তবে সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সব সময় বলেন, সর্বকালের ভালো আইনশৃঙ্খলা দেশে বিরাজমান। তিনি এ রকম কথা বলে আত্মতৃপ্তি পান। কিন্তু বাস্তবে হত্যা, গুপ্তহত্যা, খুন বাড়ছেই। জনগণের এখন কোনো নিরাপত্তা নেই।'
নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী না দিয়ে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, সেনাবাহিনী দেয়নি বলে শেষ মুহূর্তে আমাদের সমর্থিত প্রার্থী ভোট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। সেখানে একদলীয় নির্বাচন হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন নিরপেক্ষ হয় না। দেশবাসীকে ৭ নভেম্বরের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর হলো 'সিপাহি-জনতার বিপ্লবের দিন'। ঈদের পাশাপাশি এটাও আমাদের জাতীয় জীবনে একটির খুশির দিন। এই দিনেই সৈনিক ও জনগণ এক হয়ে দেশ রক্ষা করেছিল। যেভাবে একাত্তরে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল।
নরসিংদীর পৌর মেয়র হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপি নেতা খায়রুল কবীর খোকনকে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, মিথ্যা মামলায় খায়রুল কবীর খোকনকে আটক করে রেখেছে। খোকন সম্পূর্ণ নির্দোষ।
দুই ছেলে ও পরিবারের সদস্যদের ছাড়া কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মোটামুটি। এখন আমি জনগণকে নিয়ে আছি। জনগণ খারাপ থাকলে আমারও ভালো থাকার কথা নয়।' বিদেশে 'চিকিৎসাধীন' দুই ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'তাদের ওখানে একদিন আগেই ঈদ হয়ে গেছে। আমার কথা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। আগের তুলনায় তাদের অবস্থা ভালো। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরো সময় লাগবে।
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন কূটনৈতিক কোরের ডিন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত শাহের মোহাম্মদ, সৌদি রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ নাসের আল বুশাইরি, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সঞ্জয় ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড. আর এ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, শমসের মবিন চৌধুরী, রাজিয়া ফয়েজ, সেলিমা রহমান, ইনাম আহমদ চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল হালিম ও জহুরুল ইসলাম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।
বিশিষ্ট ব্যক্তি ও শিল্পপতিদের মধ্যে ছিলেন এফবিসিসিআইর সভাপতি এ কে আজাদ, সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, বিজিএমইর সভাপতি শফিকুল ইসলাম মহিউদ্দিন, সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের হায়দার আলী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রফিক-উল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক ইউসুফ হায়দার, সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহফুজ উল্লাহ, আবু সালেহ, মাহমুদ শফিক, আবদুল হাই শিকদার, শিল্পী শবনম মুস্তারী প্রমুখ।
অন্য রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম বীর প্রতীক, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব আবদুল্লাহ মো. হাসান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন